স্বরুপ দোলই, কলকাতা: নারী আন্দোলনের ভবিষ্যৎ পথে ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থার ভূমিকা নিয়ে বুধবার এক গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারের আয়োজন করল ইন্ডিয়ান স্কুল অফ উইমেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ISWSD) এবং সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি (AIDWA), পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি। যার মূল বিষয় ছিল — “ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা ও নারী আন্দোলন”।
এই সেমিনারে বক্তারা তুলে ধরেন, কীভাবে সমবায়ের মতো সংস্থাগুলি একদিকে গ্রামীণ মহিলাদের আর্থিক স্বনির্ভরতার নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে, আবার অন্যদিকে বহু ক্ষেত্রে বেসরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন মাইক্রোফিনান্সের মতো সংস্থাগুলির ফাঁদে অতি-ঋণের বোঝা তাঁদের উপর নতুন আর্থিক ও মানসিক চাপও তৈরি করছে। সেই সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসে বর্তমান কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হস্তক্ষেপে সমবায়গুলির গণতান্ত্রির পরিবেশ ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। নির্বাচন না করিয়ে দিনর পর দিন প্রশাসক বসিয়ে লুঠ করে নেওয়া হচ্ছে জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ।
সভায় মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন — নাবার্ড এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক রানা মিত্র, সারা ভারত ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের রাজ্য কমিটির সভাপতি তুষার ঘোষ, রাজ্য সমবায় বাঁচাও মঞ্চের সহ-সম্পাদক গণেশ সামন্ত, ISWSD-এর কার্যকরী কমিটির সদস্য ঈশিতা মুখার্জি, AIDWA-এর রাজ্য সম্পাদিকা কনীনিকা ঘোষ। গোটা অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও প্রাক্তন সাংসদ মালিনী ভট্টাচার্য।
বক্তারা একমত হন যে, ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে অনেক নারী আজ নিজেদের উদ্যোগে ব্যবসা শুরু করেছেন। কিন্তু যথাযথ আর্থিক শিক্ষা ও সরকারি নজরদারি না থাকলে এই ঋণ-ব্যবস্থা সহজেই শোষণের রূপ নিতে পারে।
রানা মিত্র বলেন, “আর্থিক ভাবে স্বনির্ভরতার ক্ষেত্রে শুধু ঋণ দেওয়া নয়, সচেতনতা ও ন্যায্য সুদের পরিবেশ গড়ে তোলাও জরুরি।” তুষার ঘোষের মতে, “ক্ষেতমজুর মহিলাদের হাতে শক্তি পৌঁছে দিতে হলে ক্ষুদ্র ঋণকে গণতান্ত্রিক ও সমবায়ভিত্তিক করতে হবে।”
নারী আন্দোলনের নতুন দিক
ISWSD ও AIDWA-র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই সেমিনারটি আলোচনার মাধ্যমে স্পষ্ট করে দেয়, নারী আন্দোলনের আগামী দিনগুলিতে আর্থিক স্বাধীনতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার—এই দুইয়ের সংযোগই হবে মূল দিশা।