নিউইয়র্কে ইতিহাস: প্রথম মুসলিম কমিউনিস্ট মেয়র জোহরান মামদানি, ট্রাম্পকে পাল্টা জবাব তাঁর জয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নিউইয়র্কের রাজনীতিতে নতুন ইতিহাস। মার্কিন শহরটির প্রথম মুসলিম ও প্রকাশ্যে কমিউনিস্ট ভাবাদর্শে বিশ্বাসী নেতা জোহরান মামদানি এবার নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে মেয়র পদে অধিষ্ঠিত হলেন। জন্মসূত্রে ভারতীয়, পেশায় সমাজকর্মী— এই তরুণ নেতার জয় এখন আমেরিকার রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

ট্রাম্পের হুমকি আর মামদানির জবাব

নির্বাচনের আগে থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে মামদানির বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছিলেন। এমনকি নির্বাচনের আগের রাতে তিনি হুমকি দেন— “নিউইয়র্কে কমিউনিস্ট এজেন্ডা জিতলে ফেডারেল ফান্ড বন্ধ হবে।”
কিন্তু সেই হুমকি ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে। সাধারণ শ্রমজীবী, অভিবাসী ও তরুণ ভোটারদের সমর্থনে জয়ী মামদানি ভোটের রাতে বলেন,

“আমাদের শহরকে আমরা ফের মানুষের হাতে তুলে দিলাম, পুঁজির হাতে নয়।”

বিজয়-ভাষণে নেহরুর উদ্ধৃতি

জয়ের পর নিজের বক্তৃতায় তিনি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর ঐতিহাসিক ‘Tryst with Destiny’ ভাষণ থেকে উদ্ধৃতি দেন। বলেন,

“আজ আমরা পুরনো নিউইয়র্ক থেকে বেরিয়ে নতুন নিউইয়র্কে পা রাখলাম।”

মামদানির ভাষণ জুড়ে ছিল সংহতি, সামাজিক ন্যায় এবং অর্থনৈতিক সমতার আহ্বান।

শ্রমজীবী নিউইয়র্কারদের ভরসা

তাঁর জয়ের পিছনে মূল শক্তি শহরের কর্মজীবী মানুষ ও তরুণ প্রজন্ম। বাসভাড়া নিয়ন্ত্রণ, সস্তা আবাসন, ফ্রি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, এবং শ্রমিক অধিকারের মতো ইস্যুতে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তিনি।
একটি সাধারণ স্লোগান গোটা প্রচারে ছড়িয়ে পড়েছিল — “A city for workers, not for billionaires!”

আমেরিকার রাজনীতিতে নতুন হাওয়া

বিশ্লেষকদের মতে, মামদানির এই জয় মার্কিন রাজনীতিতে নতুন এক বাঁক আনতে পারে। ট্রাম্পের রক্ষণশীল রাজনীতির বিপরীতে প্রগতিশীল রাজনীতির হাওয়া আবার জোরদার হলো।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মধ্যেই যাঁরা আরও বাম ঘরানার ভাবনা নিয়ে এগোচ্ছেন, তাঁদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।

নিউইয়র্কের এই জয় তাই শুধু শহরের নয়, একটি ভাবধারার জয়ও।

চ্যালেঞ্জের মুখে নতুন প্রশাসন

তবে সহজ পথ নয় মামদানির সামনে। বাজেট ঘাটতি, অপরাধ দমন, আর ট্রাম্প প্রশাসনের ফেডারেল চাপ— সব মিলিয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।
তবু শহরের রাস্তা থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটাই আওয়াজ—

“Zohran is the people’s Mayor!”

চুম্বকে

এক তরুণ মুসলিম নেতা, যিনি পুঁজির বিরুদ্ধে শ্রমজীবীদের পক্ষ নিলেন।
এক ট্রাম্প, যিনি তাঁর জয় ঠেকাতে মরিয়া ছিলেন।
আর এক নিউইয়র্ক, যা আবারও প্রমাণ করল— গণতন্ত্র মানে মানুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *