বেগুনে ফোমপসিস ব্লাইট: রোগ শনাক্তকরণ ও প্রতিকার | সম্পূর্ণ গাইড

নিজস্ব প্রতিবেদন: সম্প্রতি একাধিক অঞ্চলে বেগুন চাষে ব্যাপকভাবে ফোমপসিস ব্লাইট (Phomopsis blight) বা ফল পচা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে।
এই রোগটি মূলত Phomopsis vexans নামক ছত্রাকের কারণে হয়ে থাকে। রোগটি ফল, পাতা ও কাণ্ড আক্রমণ করে ফলন ও গুণমানের মারাত্মক ক্ষতি ঘটায়।

রোগের লক্ষণ

ফলের উপর ছোট হালকা বাদামি গোল দাগ দেখা যায়। সময়ের সঙ্গে দাগ বড় হয়ে গভীর বাদামি বা কালচে হয় এবং আক্রান্ত অংশ গলে পচে যায়।
ফলের ভেতরেও ছত্রাক ছড়িয়ে পড়ে। পাতায় ছোট বাদামি দাগ তৈরি হয়, যা বড় হয়ে পাতাকে শুকিয়ে দেয়।
কাণ্ড আক্রান্ত হলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে ও শাখা ভেঙে যেতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা

• আক্রান্ত গাছ, পাতা ও ফল ক্ষেতে থেকে তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
• জমিতে জলাবদ্ধতা এড়াতে ভাল নিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখতে হবে।
• ফসল কাটার পর জমির সমস্ত আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে।
• রোগ দেখামাত্র দ্রুত ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

ছত্রাকনাশক প্রয়োগের পরামর্শ

রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে কাভাচ ক্লোরথালোনিল 75WP প্রতি লিটার জলে ২ গ্রাম মিশিয়ে বিকেলে স্প্রে করতে হবে।
৫ দিনের ব্যবধানে দুইবার স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
বিকল্পভাবে কপার অক্সিক্লোরাইড বা ম্যানকোজেবও ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে একই ওষুধ বারবার না ব্যবহার করে পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন করা উচিত।

সতর্কতা ও সচেতনতা

• রোগমুক্ত ও স্বাস্থ্যকর চারা ব্যবহার করা জরুরি।
• বীজ রোপণের আগে ৫ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা বা ক্যাপটান দিয়ে শোধন করলে সংক্রমণ কমে।
• অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ এড়িয়ে চলতে হবে।
• নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শনে রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখামাত্র ব্যবস্থা নিতে হবে।

সর্বোপরি, চাষীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, সময়মতো রোগ শনাক্তকরণ এবং সঠিক প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণই বেগুনের ফোমপসিস ব্লাইট রোগের কার্যকর নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। এতে ফসলের উৎপাদন ও গুণমান বজায় থাকবে এবং আর্থিক ক্ষতিও অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *