শিমগাছে ফল ঝরে পড়া ও ফুল না আসার সমস্যা—সমাধানে কৃষি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

বরুণ কৃষ্ণ কুণ্ডু, সহ কৃষিঅধিকর্তা (প্রশাসন), কাকদ্বীপ মহকুমা

শীতের মরসুমে শিমচাষে দুটি সমস্যা বেশি দেখা দিচ্ছে— (১) কচি ফল শুকিয়ে হলদে হয়ে ঝরে যাওয়া,
এবং (২) গাছ সবল হলেও ফুল না ধরা। এতে ফলন কমে যাচ্ছে এবং গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, পুষ্টি ঘাটতি, পরাগায়ন সমস্যা, অনিয়মিত সেচ এবং আবহাওয়ার তারতম্যই প্রধান কারণ।

১) শিমগাছে কচি ফল ঝরে পড়ার প্রধান কারণ

  • জিঙ্ক, বোরন ও মলিবডেনামের ঘাটতি
  • অতিরিক্ত ঠান্ডা বা হঠাৎ তাপমাত্রার পরিবর্তন
  • অনিয়মিত সেচ বা অতিরিক্ত জল
  • পোকামাকড়ের আক্রমণ
  • দুর্বল পরাগায়ন বা ফুল থেকে ফল ঠিকমতো না ধরা

২) ফুল না আসার প্রধান কারণ

  • গাছে বোরন ঘাটতি
  • অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার প্রয়োগে পাতার বৃদ্ধি বাড়লেও ফুল কম ধরে
  • অনিয়মিত সেচে গাছ চাপের মধ্যে পড়ে
  • মাটির পুষ্টির ভারসাম্য নষ্ট হওয়া

সমাধান: কৃষি বিশেষজ্ঞদের কার্যকর পরামর্শ

ক) ফল ঝরে পড়া কমাতে স্প্রে

  • সাগরিকা (Seaweed Extract): প্রতি লিটারে ২ মিলিলিটার
  • ট্রাসেল মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট (Zinc + Boron + Molybdenum): প্রতি লিটারে ৩ গ্রাম

সকালে বা বিকেলে পাতায় স্প্রে করলে হরমোন কার্যক্ষমতা বাড়ে ও ফল ঝরার হার কমে।

খ) ফুল না আসার সমস্যা দূর করতে

  • বোরন ২০% পাউডার: প্রতি লিটার জলে ২ গ্রাম—বিকেলে স্প্রে

৫–৭ দিনের মধ্যে নতুন ফুল আসতে শুরু করে এবং পরাগায়ন উন্নত হয়।

৩) অতিরিক্ত পরিচর্যার নির্দেশ

  • মাটি যেন শুকিয়ে না যায়—হালকা নিয়মিত সেচ
  • গাছের গোড়ায় আগাছা পরিষ্কার রাখা
  • প্রয়োজনে গাছের গোড়া আলগা করা
  • পোকামাকড় দেখা দিলে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ
  • অতিরিক্ত ঠান্ডায় হালকা ছাউনি দেওয়া
  • নাইট্রোজেন সার কমিয়ে ব্যালান্সড এনপিকে সার ব্যবহার

সঠিক সময়ে পুষ্টি সরবরাহ, নিয়মিত সেচ ও যত্ন নিলে শিমগাছ দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। ফুল না আসা বা ফল ঝরা—দুটি সমস্যাই নিয়ন্ত্রণে আসে। সময়মতো ব্যবস্থা নিলে ফলনের ক্ষতি অনেকটাই রোধ করা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *