অন্ধ্র থেকে আমদানি নয়, কৃষকরাই এবার তৈরি করবেন ওলের বীজ, প্রশিক্ষণ দিল বিসিকেভি

মিলন খামারিয়া, কল্যাণী: কন্দ ফসলের উপকারিতা ও চাষে লাভের দিক তুলে ধরতে কৃষকদের নিয়ে প্রশিক্ষণ বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৫ জুন এই প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়। Tuber vegetables farming training at BCKV

আলু, মিষ্টি আলু, কচু, ওলকচু, মানকচু, ওল, এবং কিছু ক্ষেত্রে গাজর, মুলা, শালগম ইত্যাদি কন্দ জাতীয় ফসলের মূল বা শেকড় খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আলু বিশ্বের অন্যতম প্রধান খাদ্য শস্য এবং এটি বিভিন্ন ভাবে রান্না করে খাওয়া যায়। বিশেষ করে মিষ্টি আলু প্রো-ভিটামিন-এ অর্থাৎ বিটা ক্যারোটিন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ একটি পুষ্টিকর সব্জি। আবার কচু বিভিন্ন ধরনের হয়। যেমন- মুখীকচু, পঞ্চমুখী কচু, পানিকচু ইত্যাদি। এছাড়াও কিছু কন্দ বা মূল সব্জি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, যেমন – কাসাভা। এগুলো সবই কন্দ জাতীয় বা মূল জাতীয়, যা খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

এই কন্দ ফসল নিয়েই গত ১৫ ই জুন, রবিবার, বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ICAR-AICPR on Tuber Crops বা কন্দ ফসল বিভাগ, তপশিলি জাতির ৩০ জন চাষি ভাইকে প্রশিক্ষণ দিল (SCSP প্রজেক্ট)। নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগণা জেলার চাষিরা এই প্রশিক্ষণ শিবিরে উপস্থিত হয়েছিলেন। এই প্রশিক্ষণ দেন কৃষি বিজ্ঞানী অধ্যাপক সুরজিৎ মিত্র।

এই প্রশিক্ষণ শিবিরে বিশেষ করে ওল চাষের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। অন্যান্য অনেক ফসল চাষের চেয়ে ওল চাষ বেশ লাভজনক। কিন্তু ওলের বীজ আমাদের রাজ্যের চাষিরা তৈরি করে না, আসে অন্ধ্রপ্রদেশ বা বিহার থেকে। সেই বীজের দাম অনেক বেশি হয়, ৮০-১০০ টাকা পর্যন্ত। ওল বীজ নিজেরাই তৈরি করে চাষিরা যাতে চাষ করতে পারেন তার জন্যই প্রশিক্ষণ দিল বিশ্ববিদ্যালয়।

বীজ তৈরির জন্য মিনিসেট প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। এতে প্রথমে বছরে ১৫০-২০০ গ্রামের ওল বীজ চাষ করে সেটাকে ৫০০-৭০০ গ্রাম করতে বানাতে হবে। পরের বছর সেটা লাগালে দুই থেকে তিন কেজি পর্যন্ত ওল পাওয়া যায়। এতে লাভ বেশি হবে ও বীজের সমস্যাও মিটবে। কারণ এক হেক্টর (সাড়ে সাত বিঘা) জমিতে ছয়-সাত টন বীজ লাগে। সেখান থেকে চাষ করে ৪০-৫০ টন পর্যন্ত ওল পাওয়া যায়। বাজারে দামও ভালো থাকে। সেক্ষেত্রে কিছু ওল আলাদা করে বীজের জন্যই রেখে দিতে হবে। পরের বছর সেটা রোপণ করে আবার ওল পাওয়া যাবে।

ওল সব্জি হিসেবে যেমন খাওয়া যায় তেমন ওলের প্রক্রিয়াকরণ করে ওলের আচার, ওলের বড়ি, ওলের গুঁড়ো ইত্যাদি তৈরি করেও খাওয়া যায়। বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাও তাতে স্বাবলম্বী হবেন।

ওলে প্রচুর পুষ্টি উপাদান থাকে যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। এটি হজম শক্তি বাড়ায় ও ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ওলে স্ট্রেস কমাতে এবং শরীরকে রোগ থেকে রক্ষা করার ক্ষমতাও রয়েছে।

মিষ্টি আলুর ক্ষেত্রে আলুর লতা লাগাতে হয়। বিশেষ করে হলুদ রঙের মিষ্টি আলুর বাজারে ভীষণ চাহিদা রয়েছে কারণ কম পাওয়া যায়, যা চোখের জন্য ভীষণ উপকারী। বড়ো আকারে মাঠের জমিতে যেমন চাষ করা যায় আবার প্রত্যকের বাড়িতে অল্প সব্জি বাগানেও করা যায়। স্বাস্থ্যের জন্য হলুদ মিষ্টি আলু বা সাদা মিষ্টি আলু ভীষণ উপকারী। মিষ্টি আলু প্রক্রিয়াকরণ করেও খাওয়া যায়। মিষ্টি আলুর লতা সাধারণ উঁচু জমিতে লাগাতে হয়। জল জমলে গাছ নষ্ট হয়ে যায়।

আবহাওয়ার পরিবর্তনের জন্য উষ্ণতা বাড়লে অনেক ফসল ফলানোতে সমস্যা হবে। সেখানে কন্দ ফসল মাটির নীচে থাকার কারণে তার চাষ করা সম্ভব হবে বলেন জানান কৃষি বিজ্ঞানী।  তাই বিশ্ব জুড়েই কন্দ ফসল নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে এবং এর গুরুত্ব বাড়ছে।

কন্দ ফসলের চাষ সম্পর্কে কন্দ ফসল বিভাগের আধিকারিক অধ্যাপক সুরজিৎ মিত্র বলেন, অন্যান্য ফসল, যেমন ধান, পাট, গম চাষের চেয়ে কন্দ ফসলের চাষে লাভ বেশি হয়। চাষিদের উচিত অধিক আয়ের জন্য কন্দ ফসল চাষ করা। বিদেশেও কন্দ ফসলের চাহিদা রয়েছে। কমলা রঙের মিষ্টি আলুতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। ডায়াবেটিস রোগীরাও মিষ্টি আলু খেতে পারেন, চোখের রোগীদের জন্যও উপকার। তাই অর্থনৈতিক ও শারিরীক সুস্থতার কথা মাথায় রেখে কন্দ ফসল চাষে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

এদিনের প্রশিক্ষণ শেষে বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবিষ্কার ‘বিধান জগন্নাথ’, ‘কমলা সুন্দরী’ খুব ভাল জাতের মিষ্টি আলু। এই গুলোর লতা চাষ করার জন্যও চাষিদের দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বীজ, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্স, ব্যাগ ইত্যাদি তুলে দেওয়া হয় হয়েছে চাষিভাইদের হাতে। এই সমস্ত প্রশিক্ষণ কাজে সাহায্য করেন গবেষক – বিশ্বজিৎ কর্মকার, শুভদীপ চৌধুরী, তনু রায় ও কাভ্যা. ডি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *