কলা গাছের পানামা বা ফুজেরিয়াম রোগ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

হরষিত মজুমদার, কবি ও কৃষিবিদ

কলার পানাম বা ফুজেরিয়াম একটি ছত্রাক ঘটিত রোগ। ছত্রাকটির বিজ্ঞান সম্মত নাম Fusarium oxysporam. কলাবাগানের মাটি স্যাঁতসেঁতে বা বন্যার কারণে জলমগ্ন হলে এই রোগের প্রাদুর্ভাব খুব বেড়ে যায়। এখানে আমরা আলোচনা করব, কী ভাবে বুঝবেন এই ছত্রাক আক্রমণ করেছে এবং তার প্রতিকারের পদ্ধতি।

উপসর্গ:

(১) কলা গাছের পুরনো পাতা পাতায় প্রথমে আক্রমণ করে এই ছত্রাক। এবং ধীরে ধীরে উপরের দিকে পৌঁছে কচিপাতাকে আক্রমণ করে। পুরানো পাতা হলুদ হয়ে নেতিয়ে যায়।

(২) কলাপাতা ও পত্রবৃন্ত হলদে ও দুর্বল হয়ে পড়ে এবং কাণ্ডের গোড়া থেকে ঝড়ে পড়ে যায়।

(৩) রোগাক্রান্ত পাতা বাদামী ও শুষ্ক হয়ে যায় এবং কাণ্ডকে ঘিরে কালো স্কার্টের মতো অংশ তৈরি হয়।

(৪) কাণ্ড চিরে যায়।

(৫) কাণ্ডের উপরে হলদেটে থেকে লালচে আঁকাবাঁকা দাগ দেখা দিতে শুরু করে।

(৬) কলা গাছের যদি প্রস্থচ্ছেদ বা আড়াআড়ি কাটা হয় তবে কাণ্ডের আভ্যন্তরীণ টিস্যু বা ভেতরের অংশে বিবর্ণতা প্রকাশ পায় এবং সেখানে পচন লক্ষ্য করা যায়। শেষ পর্যন্ত, মাটির উপরের এবং নিচের অংশ পচে যায় গোটা গাছটি মারা যায়।

রোগ নিয়ন্ত্রণ:

(১) যান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

(ক) আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে, হয় পুড়িয়ে দিতে হবে অথবা এক থেকে দেড় হাত মাটির তলায় পুঁতে দিতে হবে।

(খ) গাছের গোড়ায় যাতে জল না জমে, নিকাশী ব্যবস্থা ঠিক আছে কিনা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

(গ) জল তেউড় (Water Sucker) ব্যবহার করা যাবে না। সর্বদা তরবারি তেউড় (Sward Sucker) চার হিসাবে রোপন করতে হবে।

(ঘ) কন্দ শোধন করে গাছ লাগাতে হবে।

(ঙ) কলা বাগানে সূর্যালোক যাতে ভালভাবে প্রবেশ করতে পারে, হাওয়া চলাচল ভাল হয়, বাগানের মাটি স্যাঁতসেঁতে না হয়, সঠিক দূরত্ব রেখে চারা রোপন হচ্ছে কিনা নজর রাখতে হবে।

(২) জৈব নিয়ন্ত্রণ

৫০ কেজি ভাল পচানো গোবর সারের সঙ্গে ৫০০ গ্রাম উপকারী ছত্রাক (ট্রাইকোডারমা ভিরিডি বাজার নাম -নিরপট/ট্রাইকো ডারমি, প্রভৃতি) + ৫০০ গ্রাম উপকারী ব্যাকটেরিয়া  (সিউডোমোনাস  ফ্লোরোসেন্স-বাজার নাম- রক্ষক/আর্মি/সিউডো গার্ড, প্রভৃতি) ভাল করে মিশিয়ে এক সপ্তাহ ছায়া জায়্গায় রেখে দিন। তার পর বিকালের দিকে প্রতি কলার ঝাড়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিন। এই সার ফুজেরিয়াম ও অন্য ক্ষতিকারক জীবাণু বিরুদ্ধে লড়াই করে কলাগাছে রোগ মুক্ত করবে।

জৈব সার প্রয়োগের সতর্কতা:

ক) কখনো রোদের সময় এই জীবাণু প্রয়োগ করবেন না।

খ) এই সার প্রয়োগের সময় অন্তত ১৫ দিন পর্যন্ত কোনও রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করবেন না।

(৩) রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

এই রোগের এখনো পর্যন্ত কোনও ভাল রাসায়নিক ছত্রাকনাশক নেই। তাই চাষের প্রথম থেকে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে এই রোগ জমিতে না হয়। তবে রাসায়নিক হিসাবে নিচের যে কোনও একটি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নির্দিষ্ট মাত্রায় ৭ দিন অন্তর দুবার সপরকরলে সুফল পাওয়া যায়।

(ক)  Carbendazim 50% WP  @1 gm +  Mancozeb 85%WP- @1 gm / Litre water

(খ) Sprint (Mixture of Carbendazim 12% & Mancoze 50%WP) @2.5 gms/Litre water

(গ) Azostrobin 25% SC( Seodosel/Amister) @ 1-2 ml/Litre water

হরষিত মজুমদার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *