নাগরিকত্ব যাচাইয়ের নামে কি আরএসএসের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে নেমেছে কমিশন, কেন্দ্রীয় সরকার? প্রশ্ন তুললেন বিজয় পাল

বিজয় পাল

নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনের নামে নাগরিকত্ব যাচাই করতে চাইছে। এই নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে নানা যুক্তি উপস্থাপন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অন্য কোনো আলোচনায় না গিয়ে সহজ দুটি প্রশ্ন কমিশনের উদ্দেশে রাখছি।

১) ভোটার তালিকা ও ভোটার পরিচয়পত্র প্রস্তুত করেছে নির্বাচন কমিশন। সেই নির্বাচন কমিশন এখন বলছে এই নথি নাগরিকত্ব প্রমাণ করে না। নাগরিক না হলে ভোটাধিকার থাকে কী করে? নির্বাচন কমিশন কে নাগরিকত্ব যাচাইয়ের ক্ষমতা সংবিধান দেয়নি। তাই তারা সরাসরি নাগরিকত্ব প্রমাণের কথা বলছে না। তারা ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকারের কথা বলে পেছনের দরজা দিয়ে নাগরিকত্ব যাচাই করছে। এটা আরও ভয়ঙ্কর। পেছনের দরজা দিয়ে আরএসএস- এর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাইছে। এটা নয়া ফ্যাসিবাদের লক্ষণ। এতোদিন কমিশন জানিয়েছে ভোটার তালিকায় নাম থাকলেই সে ভোটার। ভোটার নির্ণয়ের জন্য এখন তারা যেসব নথি চাইছে তা কমিশনের এক্তিয়ার বহির্ভূত। সুপ্রিম কোর্ট ও বলেছে ভোটার কার্ড ও আধার কার্ডকে বৈধ নথি হিসেবে গণ্য করতে হবে। কমিশন বলছে না। কমিশন কে না বলার অধিকার সংবিধান দেয়নি। সাংবিধানিক সংস্থা নিজেই সংবিধান প্রদত্ত অধিকার বহির্ভূত কাজ করে সাংবিধানিক সংকট তৈরি করছে। এটাই নয়া ফ্যাসিবাদ। তারা সংবিধান কে অচল করে খারিজ করতে চায়। এভাবে নৈরাজ্য ডেকে এনে সব ক্ষমতা এক নেতার হাতে দিতে চায়। তাই কমিশন নিজের তৈরি করা নথি কে অস্বীকার করছে। তাই এখন বলছে এই নথি দিয়ে ভোট দেওয়া যাবে না।

ভোটার তালিকা ও ভোটার পরিচয় পত্র যথেষ্ট যাচাইয়ের পরে তৈরি করে কমিশন। এখন তারাই বলছে এটা উপযুক্ত নথি নয়। তাহলে তো তাদের হাত থেকে সমস্ত ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে নির্বাচন কমিশন খারিজ করা উচিত। জনগণের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন পরিচালনার জন্য সংবিধানে নতুন কী রকম কাঠামো যুক্ত করা হবে তা নিয়ে আলোচনা করা উচিত।

২) কমিশন বলছে আধার কার্ড ও যথেষ্ট নয়। আধার কার্ড তৈরি করেছে ভারত সরকার। আধার কার্ডের ওপর লেখা আছে ‘ আধার আমার পরিচয় ‘। সরকার আমাদের পরিচয় ঠিক করে দিয়ে এখন বলছে তোমাকে তোমার পরিচয় দিতে হবে। কী আজব কথা? তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া হয় আবার পরিচয় ঠিক করতে হবে তাহলে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্ব নিয়ে প্রমাণ করতে হবে কেন আমার পরিচয় বৈধ নয়। আমাকে কেন প্রমাণ করতে হবে?

সরকারের তৈরি করা নথি যদি গ্রহণযোগ্য না হয় তাহলে সরকার থাকবে কেন? কেন ভারত সরকার খারিজ করা হবে না? আধার কার্ড দিয়ে ট্যাক্স দেন আপনি। সেই ট্যাক্স বৈধ। কিন্তু আপনি বৈধ নয়। ট্যাক্স নেয় সরকার। তারা বৈধ কিন্তু আপনি বৈধ নয়। ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড দিয়ে ভোট দিই আমরা। আমরা বৈধ না হলে সরকার কীভাবে বৈধ হয়? সেই সরকার দ্বারা গঠিত কমিশন কীভাবে বৈধ হয়? তাও কমিশন বলছে আমি আপনি বৈধ কিনা প্রমাণিত নয় কিন্তু আমাদের দ্বারা সৃষ্ট সব কিছু বৈধ।

৩ ) এখন নির্বাচন কমিশন যে সব নথি চাইছে তার ভিত্তিতে যারা নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত হবে দুদিন পরে নির্বাচন কমিশন যে আবার বলবে না, এই নথি নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট নয় তার গ্যারান্টি কী?

৪ ) আমার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ প্রথাগত উচ্চ শিক্ষিত বন্ধুরা একটি কারণ দেখিয়ে বলছেন, দেখছেন না কীভাবে চোরাই পথে ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড তৈরি হচ্ছে? তাই এগুলো উপযুক্ত নথি হতে পারে না। বললাম তাই নাকি?
কালো টাকা জব্দ করার জন্য নোটবন্দি করা হল। তা কালো টাকা জব্দ না হয়ে সাদা টাকা হয়ে গেল কীভাবে? এটা তো রোহিঙ্গা আর বাংলাদেশি মুসলমানরা করেনি। তার কী হবে?

নোটবন্দি করে ২ হাজার টাকার নোট ছাপিয়ে বলা হল এই নোটের জাল পৃথিবীর কোনো জালিয়াত করতে পারবে না। নোট বেরোনোর এক মাসের মধ্যে জাল ২ হাজার টাকার নোটে বাজার এমনভাবে ছেয়ে গেল যে ২ হাজার টাকার নোট তুলে নিতে বাধ্য হল ‘সর্বশক্তিমান’ মোদীজি। তাহলে নোট যখন জাল হচ্ছে নোট তুলে নেওয়া কি সমাধান?

ডাক্তার বন্ধুকে বললাম জাল ডিগ্রির ডাক্তার ধরা পড়ে বলে সব ডাক্তারের সার্টিফিকেট বাতিল করা হবে?
জালিয়াতি চক্র রুখতে হবে। রুখতে না পারা সরকারের ব্যর্থতা। কয়েকটি জালিয়াতি চক্র রুখতে না পারার খেসারত ১৪০- ১৪৫ কোটি ভারতবাসী- কে কেন দিতে হবে?

৫) যারা নাগরিকত্ব প্রমাণের কাজ করছে তাদের নাগরিকত্বের সার্টিফিকেট আছে তো ? নরেন্দ্র মোদীর নেই। সুপ্রিম কোর্টের স্বনামধন্য আইনজীবী বেনুগোপাল আরটিআই করে মোদীর নাগরিকত্বের প্রমাণ চেয়েছিলেন। আরটিআই কর্তৃপক্ষ জানায়, ভোটার তালিকায় মোদীর নাম আছে তাই তিনি ভারতের নাগরিক। তার বেলা ? সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বলেছেন, যে সব নথি চাওয়া হচ্ছে, তা তো আমিই দিতে পারব না। তার বেলা ?
জনস্বার্থের ইস্যু থেকে নজর ঘোরানো ও গরীবস্য গরীবের ওপর বুলডোজার চালিয়ে আতঙ্কে রাখা ছাড়া আর কোন উদ্দেশ্য নেই। কোথায় গেল এনআরসি, ক্যা..

এক একটা আতঙ্ক সৃষ্টির ইস্যু তুলে জীবন জীবিকার ইস্যু আড়াল করার নামই হল আজকের নয়া ফ্যাসিবাদ।একে রুখতে হবে। যে কাগজ চাইতে আসবে আগে তার কাগজ দেখাতে বলতে হবে। না হলে কাগজ আমরা দেখাব না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *