প্রদীপের তলায় আলো ফেলল ‘চিরসখা’, পুজোর মুখে বসতিবাসীর মুখে হাসি ফুটিয়ে নতুন পোশাক বিতরণ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা: দেবীপক্ষের সূচনায় যখন আনন্দে মাতোয়ারা গোটা বিশ্বের আপামর বাঙালি, তখন বড়ই মলিন কলকাতার দক্ষিণেশ্বর স্টেশন সংলগ্ন একটি বস্তি। যে বস্তিতে অভাবের কারণে নতুন পোশাক কেনা প্রায় স্বপ্নের মতো, সেই বস্তিতেই খুশির জোয়ার এনেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চিরসখা ফাউন্ডেশন। মহালয়ার দিন সকালে বস্তিতে বসবাসকারী শতাধিক মানুষের হাতে নতুন পোশাক তুলে দেন চিরসখা ফাউন্ডেশনের সদস্যরা।

দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের অনতিদূরে বড় অবহেলায় দিন কাটে এই বস্তির বাসিন্দাদের। নোংরা জমা জল ও আবর্জনার দুর্গন্ধে এখানে পুজোর মন ভোলানো সুগন্ধ পৌঁছয় না বললেই চলে। ছেঁড়া প্লাস্টিক, ফুটো টিন দিয়ে কোনও ভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই বানিয়ে দিন গুজরান করেন তাঁরা। এঁদের অধিকাংশই দিনমজুর বা গৃহকর্মী। প্রতিদিনের জীবনযাপনের লড়াইয়ে পুজো বা উৎসবের আনন্দ তাদের কাছে বিলাসিতা মাত্র। কিন্তু এবার সেই ছবিটা বদলে দিল চিরসখা ফাউন্ডেশন। সংস্থার সদস্যরা পুজোর অনেক আগে থেকেই এই উদ্যোগের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিবারের সদস্য সংখ্যা এবং তাদের পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন তাঁরা। সেই অনুযায়ী কেনা হয় শাড়ি, টি-শার্ট, ফ্রক, সহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক।

বিতরণের দিন বস্তি এলাকায় উৎসবের আমেজ ছিল চোখে পড়ার মতো। তাঁদের চোখে মুখে ছিল আনন্দের ছাপ। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে একে একে সকলে নিজেদের নতুন পোশাক গ্রহণ করেন।

এক প্রবীণ বাসিন্দা, আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “পুজোর সময় নতুন জামা পরা আমাদের কাছে বহু দিনের স্বপ্ন। কিন্তু কখনওই সেভাবে হয়ে ওঠেনি। এইবার চিরসখা ফাউন্ডেশন আমাদের সেই স্বপ্ন পূরণ করল। এই খুশির অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না।” ছোট শিশুরা নতুন জামা সঙ্গে চিপ্স, ওয়েফার, কোল্ড ড্রিংক পেয়ে খুব খুশি। তাদের উজ্জ্বল চোখগুলো বলে দিচ্ছিল কতখানি আনন্দ পেয়েছে তারা।

চিরসখা ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট পিয়ালি বোস জানান, “আমাদের লক্ষ্য কেবল আর্থিক সাহায্য করা নয়, বরং মানুষের পাশে থেকে তাঁদের সাবলম্বী করে তোলা। খুব তাড়াতাড়ি এই বস্তির শিশুদের নিয়ে নাচ,গান,আঁকা ও পড়াশোনার ক্লাস শুরু হবে। মহিলাদের সাবলম্বী করতেও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ” সংস্থার সেক্রেটারি রাজদীপা ঘোষ জানান, “পুজো বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব। এই উৎসবে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষগুলো যেন নিজেদের বঞ্চিত মনে না করে, সেটাই ছিল আমাদের মূল উদ্দেশ্য। আমাদের ছোট এই প্রচেষ্টা যদি তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারে, তবে সেটাই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”

চিরসখা ফাউন্ডেশন সম্পূর্ণ মহিলাদের দ্বারা চালিত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। গরীব পিছিয়ে পরা মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের জীবনযাত্রার মান যাতে সামান্য হলেও উন্নত করা যায়, সেই প্রচেষ্টায় সবসময় ব্রতী।

এই উদ্যোগ কেবল নতুন পোশাক বিতরণ নয়, এটি একটি মানবিক বার্তা। এটি প্রমাণ করে যে, ছোট ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে সমাজে কতটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। চিরসখা ফাউন্ডেশনের এই দৃষ্টান্ত নিঃসন্দেহে অন্যান্য সংস্থা এবং বিত্তবান মানুষদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। ভবিষ্যতে এই ধরনের আরও উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে সেতু বন্ধন তৈরি হবে বলে আশা করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *