নিজস্ব সংবাদদাতা, ডয়মন্ডহারবার: দিন দিন কৃষি যে ভাবে অলাভজনক হয়ে উঠছে তাতে ভবিষ্যতে কৃষিকাজের জন্য শ্রমিক পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আধুনিক যন্ত্রের উপরই নির্ভর করতে হবে কৃষকদের। যেমন কমবাইন্ড হার্ভেস্টিং মেশিন। বাংলার কৃষি জমিতে কয়েক বছর হল নেমেছে এক সঙ্গে ধান কাটা ঝাড়ার এই মেশিন। তবে এখনও সে ভাবে প্রচলিত হয়নি। তবে যেখানে যেখানে তা কৃষরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, তাঁরা বেশ উৎসাহী এই মেশিন নিয়ে, যেমন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ডায়মন্ড হারবার ১ নম্বর ব্লকের বাসুলডাঙ্গা অঞ্চলের চাঁদা গ্রামের কৃষকরা।
সম্প্রতি এখানকার মাঠে নামে জিএএম কোম্পানির ওমবিনেট হার্ভেস্টার। ১০২ হর্শ পাওয়ারের এই কম্বাইন্ড হার্ভেস্টিং মেশিন মাত্র ২০ মিনিটে এক বিঘা জমির ধান কেটে ধান ও খড় আলাদা করে দিচ্ছে। তবে প্রায় সব কমবাইন্ড হার্ভেস্টিং মেশিনের মতো এতেও খড় পাওয়া যাবে না। তা কার্যত পলের আকারে মাঠেই জমা হবে। তবে মাঠে জল জমে গেলেও এই মেশিন নামিয়ে নিমেশে ধানা তুলে নেওয়া যাবে। এই মেশিনটির বাজার মূল্য প্রায় ২৬ লাখ টাকার মতো। অনেকেই এটি ব্যক্তিগত বা কোনও সংস্থার দ্বারা কিনে ভাড়া খাটাচ্ছেন।
এভাবে ধান কাটার সময় প্রায় ৭০ কেজি ধান মেশিন নিজের পেটের মধ্যে রাখতে পারে। তার পর সেই ধান ট্রাক্টর বা অন্য কোথাও স্থানান্তরিত করতে হয়। ডায়মন্ড হারবারে দেখা গেল কৃষকরা বস্তায় ভরে দিব্বি টোটোয় করে ধান বাড়ি নিয়ে চলে যাচ্ছেন। আমন ধান কাটার মরশুমে শ্রমিক ঘাটতির কালে এখন রাজ্যের নানা জায়গায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই আধুনিক ধান কাটাই ঝাড়াই মেশিন।
চাঁদা গ্রামের কৃষক অজয় মিস্ত্রি বলেন, ‘ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। আবার শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে খরচ বেশি পড়ছে সময় বেশি লাগছে। যন্ত্রে ধান কাটতে সময় খুবই কম লাগছে। প্রায় ২০ মিনিটে আমার এক বিঘা জমির ধান কেটে দিয়েছে। খরচ কম, আমাদের লাভও হচ্ছে’। বিগত কয়েক বছর ধরেই আমন মরশুমে ধান কাটার শ্রমিকের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে শ্রমিক না মেলায় ধান কাটতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল কৃষকদের। এমনকি শ্রমিক দিয়ে ধান কাটায় খরচ বেশি হচ্ছে। বর্তমানে ধান কাটার দক্ষ শ্রমিকের সমস্যা প্রায় গোটা জেলা জুড়ে। আবার শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে গিয়ে অনেকটাই সময় সাপেক্ষ ছিল। এই সমস্ত সমস্যার সমাধান করতেই কৃষি দফতরের পক্ষ থেকে আধুনিক ধান কাটার যন্ত্র জেলাতেও ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
ইতিমধ্যে কৃষকদের অনেকেই নিজেদের উদ্যোগেও আধুনিক ধান কাটার কৃষি যন্ত্র ব্যবহার করছেন। যন্ত্রের চালক দীপঙ্কর বলেন, ‘জমি ভাল থাকলে ১৫ থেকে ২০ মিনিটে এক বিঘা জমির ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে এই মেশিন দিয়ে ধান কাটছি বিভিন্ন মাঠে। এ বছর চাহিদা বেড়েছে মেশিনের। কিন্তু মাঝে মধ্যেই কিছু চাষির সঙ্গে সময়ের হেরফেরে জন্য কথা কাটাকাটি হচ্ছে। সকলে তো আর বোঝেন না মাঠের ধান গাছ দাঁড়িয়ে থাকলে এবং মাটি শক্ত থাকলে সঠিক সময়ের মধ্যে কাটা সম্ভব হয়। যখন ধান শুয়ে ধাকে এবং মাটি নরম থাকে তখন সময় একটু বেশি লাগে। তবে সার্বিক ভাবে এই যন্ত্রের ব্যবহারে বেশির ভাগ কৃষক সন্তুষ্ট’।