ঘূর্ণিঝড় মান্থা আছড়ে পড়ল অন্ধ্র উপকূলে, দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা

নিজস্ব সংবাদদাতা | কলকাতা | ৩০ অক্টোবর ২০২৫

ঘূর্ণিঝড় ‘মান্থা’ মঙ্গলবার রাত দশটা নাগাদ তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের রূপে অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলের কাকিনাড়া বন্দরের কাছে স্থলভাগে আছড়ে পড়ে। রাত সাড়ে এগারোটা থেকে সাড়ে বারোটার মধ্যে মূল ল্যান্ডফল সম্পূর্ণ হয়, তখন ঘূর্ণিঝড়ের বেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১১০ কিলোমিটার
এরপর স্থলভাগে প্রবেশের পর শক্তি হারিয়ে এটি বর্তমানে একটি সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।

আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় মান্থার প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা ও বিহার–সহ একাধিক রাজ্যে বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করা হয়েছে।


🌊 মৎস্যজীবীদের জন্য নিষেধাজ্ঞা

আবহাওয়া দপ্তর স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে — ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ
সমুদ্রে উচ্চ তরঙ্গ ও ঘূর্ণাবর্ত সক্রিয় থাকায় উপকূলের কাছে মাছ ধরা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি, দক্ষিণবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে সমুদ্রের ঢেউ উঁচু হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।


⛈️ দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার সতর্কতা

আজ বুধবার থেকে হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলায় ভারী বৃষ্টি ও ৩০-৪০ কিমি বেগে দমকা বাতাসের পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর।
বৃহস্পতিবার ভারী বৃষ্টি হতে পারে পুরুলিয়া, বীরভূম, পূর্ব-পশ্চিম বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদে
শুক্রবারও কিছু জেলায় বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে বীরভূম ও মুর্শিদাবাদে

শনিবারে বৃষ্টি কিছুটা কমলেও, বিচ্ছিন্নভাবে বজ্রবিদ্যুতসহ হালকা বৃষ্টি হতে পারে। রবিবার থেকে আকাশ পরিষ্কার হওয়ার সম্ভাবনা।


🌧️ উত্তরবঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা

৩১ অক্টোবর পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় অতি ভারী বৃষ্টির (২০০ মিমি পর্যন্ত) সতর্কতা জারি হয়েছে।
বিশেষ করে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বেশি।
মালদা ও দুই দিনাজপুরেও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত দমকা বাতাসের বেগ থাকবে ঘণ্টায় ৩০–৪০ কিলোমিটার।


🌾 কৃষকদের জন্য বিশেষ পরামর্শ

আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টির কারণে পাকা ধান ও ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
দক্ষিণবঙ্গের চাষীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে — মাঠে পাকা ধান বা ফসল থাকলে দ্রুত কেটে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে।
পাহাড়ি এলাকাগুলিতে ধসের আশঙ্কা থাকায় সতর্ক থাকার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।


🌇 কলকাতার আবহাওয়া

আজ সকাল থেকেই কলকাতায় মেঘলা আকাশ। বুধবার ও বৃহস্পতিবার বৃষ্টির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
বজ্রবিদ্যুৎসহ মাঝারি বৃষ্টির সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা বাতাস বইতে পারে।
আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৭.০ ডিগ্রি, আর গতকাল দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস
আর্দ্রতার পরিমাণ ৫৭ থেকে ৯৪ শতাংশের মধ্যে।


🌍 দেশের অন্যান্য রাজ্যে পরিস্থিতি

অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, তেলেঙ্গানা, ছত্তিশগড় ও বিদর্ভ অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা।
এছাড়া বিহার, ঝাড়খণ্ড, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, কেরল ও মধ্যপ্রদেশের সংলগ্ন এলাকাতেও বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।


📡 আবহাওয়া দপ্তরের সারসংক্ষেপ

  • উত্তরবঙ্গে অতি ভারী বৃষ্টির কমলা সতর্কতা (Orange Alert)
  • দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা, সঙ্গে দমকা হাওয়া
  • পাহাড়ি এলাকায় ধসের আশঙ্কা
  • মৎস্যজীবীদের জন্য সমুদ্রে যাওয়া নিষেধ
  • ফসল ও নিচু এলাকায় জল জমার সম্ভাবনা

ঘূর্ণিঝড় মান্থা আপাতত দুর্বল হলেও, তার প্রভাব আগামী দু’দিন পূর্ব ভারতে বজায় থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।
দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গ পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির ফলে জলজমা, যানজট এবং কৃষিক্ষেত্রে কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা থাকায় রাজ্য প্রশাসন ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *