ওয়েব ডেস্ক: আন্তর্জাতিক সংবাদপত্র Financial Times-এর এক রিপোর্টে উঠে এসেছে রুশ তেল আমদানি নিয়ে নতুন তথ্য। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, Murmansk বন্দর থেকে তেলবাহী কিছু নিষিদ্ধ জাহাজ ট্রান্সপন্ডার বন্ধ রেখে ওমান উপসাগরে পৌঁছে তেল অন্য এক ট্যাঙ্কারে হস্তান্তর করে। যা পরে ভারতে এসে গুজরাটের মুন্দ্রা বন্দরে তেল খালাস করে। এই জাহাজ-ভিত্তিক সরবরাহের সঙ্গে HMEL-এর নামও এসেছে প্রতিবেদনে। তবে কোম্পানির দাবি, তারা সমস্ত আইন ও বাণিজ্যিক নিয়ম মেনেই ক্রয় করেছে।
HMEL হল, হিন্দুস্থান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড (HPCL) এবং মিত্তাল এনার্জি ইনভেস্টমেন্টস প্রাইভেট লিমিটেডের (MEIL) একটি যৌথ উদ্যোগ। HMEL একটি পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারিত্বের মাধ্যমে গঠিত সংস্থা।
রাশিয়ার মুর্মান্স্ক বন্দর থেকে পাঠানো তেলবাহী জাহাজের মাধ্যমে ভারতে তেল সরবরাহ নিয়ে নয়া বিতর্কের জন্ম দিয়েছে Financial Times-এর একটি অনুসন্ধানমূলক রিপোর্ট। রিপোর্টে বলা হয়েছে, রুশ তেল বহনকারী চারটি নিষিদ্ধ জাহাজ — Belgorod, Danshui, Dignity এবং Primorye — ট্রান্সপন্ডার বন্ধ রেখে (transponder off mode) ও ভ্রান্ত অবস্থান সম্প্রচার করে ওমান উপসাগরে পৌঁছেছিল। সেখানেই তারা ‘ship-to-ship’ পদ্ধতিতে তেল স্থানান্তর করে Samadha নামের অপর একটি ট্যাঙ্কারে, যেটি পরে ভারতে এসে মুন্দ্রা বন্দরে তেল নামায় এবং তা পাইপলাইনে করে পাঞ্জাবের ভাটিন্ডা রিফাইনারি পর্যন্ত পৌঁছায়।
Financial Times-এর দাবি, এই তেল সরবরাহের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ২৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার —
অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।
⚙️ HMEL সংস্থার প্রতিক্রিয়া
রিপোর্ট প্রকাশের পর HMEL (HPCL-Mittal Energy Ltd)-এর মুখপাত্র Reuters এবং PTI-কে জানিয়েছেন— “আমাদের ক্রয় প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইন ও ভারত সরকারের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। পণ্যটি ‘ডেলিভারি বেসিসে’ কেনা হয়েছিল, ফলে জাহাজের রুট বা শিপিং-কৌশল আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল না।”
কোম্পানি আরও জানিয়েছে, তারা সাময়িকভাবে রুশ তেল কেনা স্থগিত করেছে এবং বিষয়টি পর্যালোচনা করবে।
🌍 নিষেধাজ্ঞা ও ঝুঁকি
Financial Times-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ‘Samadha’ ট্যাঙ্কারটি পূর্বে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্রিটেনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল। তবে রিপোর্ট প্রকাশের সময় পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের OFAC (Office of Foreign Assets Control)-এর নিষিদ্ধ তালিকায় কোম্পানিটির নাম ছিল না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এই অভিযোগগুলি প্রমাণিত হয়, তবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নতুন নিষেধাজ্ঞা বা তদন্ত শুরু হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত ভারত সরকার বা মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ প্রকাশ পায়নি।
🔎 বর্তমান অবস্থা
এই ঘটনার পর HMEL তাদের ক্রয় প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনা করছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত কোনও আইনি পদক্ষেপ বা তদন্তের ঘোষণা হয়নি। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রকও এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেনি।
🧩 প্রশ্নোত্তর (FAQ): ঘটনাটি নিয়ে সাধারণ প্রশ্ন ও বিশ্লেষণ
প্রশ্ন ১: এই ঘটনায় কার নাম উঠে এসেছে?
➡️ Financial Times-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এইচপিসিএল-মিত্তল এনার্জি লিমিটেড (HMEL)-এর নাম উঠে এসেছে।
এই সংস্থাই পাঞ্জাবের বঠিন্ডা রিফাইনারি পরিচালনা করে।
প্রশ্ন ২: তেল পরিবহনের মূল পথ বা রুট কী ছিল?
➡️ Financial Times-এর দাবি অনুযায়ী, রুশ তেলটি পাঠানো হয়েছিল এই পথে —
রাশিয়ার মুর্মান্স্ক বন্দর → ওমান উপসাগর (সমুদ্রের মাঝে জাহাজ থেকে জাহাজে তেল স্থানান্তর) → সামাধা নামের ট্যাঙ্কার → গুজরাটের মুন্দ্রা বন্দর → বঠিন্ডা রিফাইনারি।
প্রশ্ন ৩: এই তেল আনা কি বৈধ ছিল?
➡️ HMEL জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সব নিয়ম ও ভারত সরকারের নীতি মেনে বৈধভাবে তেল ক্রয় করেছে।
তাদের দাবি, তেল সরবরাহ করা হয়েছিল “ডেলিভারি বেসিসে”, ফলে জাহাজের রুট বা শিপিং প্রক্রিয়া তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না।
প্রশ্ন ৪: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের কোনও প্রতিক্রিয়া আছে কি?
➡️ এখন পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া বা নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা হয়নি। তবে ভবিষ্যতে কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি গুরুত্ব পেতে পারে।