বৃষ্টিতে জলের তলায় লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিয়োগ, ক্ষতিপূরণের দাবি কৃষক কনভেশন

নিজস্ব সংবাদদাতা, দাসপুর: টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে জলের তলায় চলে গেল কৃষকদের লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিয়োগ। একরের পর একর জমির ফুলকপি (Cauliflower) চারা। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর ১ নম্বর ব্লকের কৃষকরা এক কনভেশন থেকে শস্য বীমায় ক্ষতিপূরণের জোরালো দাবি তুললেন।

বৃহস্পতিবার দাসপুরের বৃন্দাবনপুরে এই কৃষক কনভেশনের আয়োজন করা হয়। কৃষক নেতা গণেশ সামন্তর নেতৃত্বে কনভেনশনের আয়োজন করেন মহাদেব শাসমল, দিলীপ মাউড়, মুরারী পাল। সমবেত কৃষকদের আলোচনা থেকে উঠে আসে কৃষকদের  কর্পোরেটদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে দিন প্রতিদিন কৃষকদের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। চাষের খরচ বাড়ছে, কমছে আয়।

মূলত শীতের সবজি ফুলকপি অন্যান্য সবজি থেকে চাষের পদ্ধতি বেশ কিছুটা আলাদা।ফুলকপি চাষীদের অত্যন্ত মেহনত করে এই চাষ করতে হয়। চাষের খরচও বিপুল। ১ একর জমিতে চাষে ১ লক্ষ থেকে ১.২৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এক একর জমিতে ১২-১৫ হাজার চারা বপন করতে হয়।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ বিভিন্ন ভাইরাস জনিত কারণে বছর কখনও সম্পূর্ণ বা আংশিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই চাষ। ফলে বিপুল পরিমান আর্থিক ক্ষতি, ঋণের বোঝা বহন করতে হয়। আষাড়ের রথযাত্রা থেকে বীজ খামার তৈরি শুরু হয় জলদি জাতের কপির জন্য। পরবর্তি কড় জলদি, পৌষালি, মাথিনা ও পর্যায় ক্রমে চৈত্র মাস পর্যন্ত চাষ হয়ে থাকে। বর্তমানে সারা বছর ফুলকপি চাষ করা যায়, গ্রিন হাউস ফার্ম তৈরি করে। ব্যয় বহুল এই চাষে। সরকারি খামার বা সমবায় পদ্ধতিতে করার জন্য প্রসাশনিক উদ্যোগ প্রয়োজন।

কনভেনশনে কৃষকরা জানান, ফুলকপি চাষিদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বছরের নিত্য সঙ্গী। ফসল নষ্ট হওয়া ছাড়াও দরদামের সমস্যা। এছাড়াও ফড়েদের অত্যাচারে ১০% ফ্রিতে দিতে হয়। কখনও দামের অভাবে মাঠেই পড়ে থেকে ফসল নষ্ট হয়।

বিজ্ঞান প্রযুক্তির যুগেও ফুলকপি চাষ সরকারি গবেষণায় জায়গায় পায় না বললেই চলে। আর পেলেও তার ফলাফল কৃষকদের কাছে পৌঁছয় না বলে অভিযোগ ওঠে কনভেনশনে। এর ফলে কর্পোরেট সংস্থার দ্বারাই বীজ, সার ও কিটনাশকই বাজারে পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে সরকারের উপস্থিতি বা নিয়ন্ত্রণ প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে যেমন ইচ্ছা দাম বৃদ্ধি করে কৃষকদের উপর বোঝা চাপানো হচ্ছে।

এই বিপুল রাসায়নিক মানব শরীরেও ক্ষতি কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। উন্নত বীজ, জৈব ভিত্তিক সার জৈব কিটনাশক উৎপাদন প্রয়োগ ও ব্যবহার সরকারি ব্যবস্থাপনায় করার দাবি ওঠে। এছাড়াও জৈব সার ও জৈব কিটনাশক তৈরিতে সরকারি ব্যবস্থাপনার সমবায় ক্ষেত্র গুলিকে ব্যবহার করলে কৃষকদের উপকার হবে বলেও মত উঠে এসেছে কনভেনশন থেকে।

দাসপুর ব্লক এলাকায় প্রায় ৩৫০ একর অধিক জমিতে ফুলকপি চাষ হয়। প্রায় ৪৫০০-৫০০০ পরিবার কপি চাষে যুক্ত। সেখানে আবহাওয়া অনুকুল থাকলে উৎপাদন ভালো হয়। বাজারে দাম থাকে না। কৃষক কম দামে বিক্রয়ে বাধ্য হয়। তাই সকরারি উদ্যোগে সবজির জন্য হিমঘর গড়ে তোলার দাবিও উঠে কনভেনশনে। যদিও এই দাবি দীর্ঘ দিনের। তবে সেই দাবি পূরণের কোনও চেষ্টা বর্তমান কেন্দ্র বা রাজ্য কোনও সরকারের তরফেই দেখা যায়নি।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা ১,২,৩ ব্লক, চন্দ্রকোনা ২ ব্লক ও দাসপুর ২ ব্লকে ফুলকপি চাষ হয়। আলু চাষে বীমা থাকলেও ফুলকপি চাষে বীমার ব্যবস্থা নেই। প্রকৃতির বিরুপতায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচতে শস্যবীমা “রক্ষা কবচ” হিসাবে কাজ করে। কিন্তু বিপুল অর্থ খরচও অনেক বেশি কর্মসংস্থান নিবিড় এই ফুলকপি চাষের কোনও শস্যবীমা ব্যবস্থা নেই। সংবিধানে উল্লিখিত শস্যবীমা ব্যবস্থা এই ফুলকপি চাষের জন্য বরাদ্দ করার দাবি জানায় কনভেনশন।

প্রসাশনের কাছে কনভেনশন থেকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে, ফুলকপি চাষকে বীমার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ফুলকপি চাষের জন্য সহজ শর্তে কৃষকদের কম সুদে ব্যাঙ্ক ও সমবায় থেকে ঋনের ব্যবস্থা করতে হবে। উন্নত বীজ সহ জৈব সার ও জৈব ঔষধ উৎপাদনে সকরারি উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। সকল ফুলকপি চাষিদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে দাবি, “আমাদের রক্ষা কবচ আমরা আদায় করে নিতে পারব”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *