কাঁঠালগাছ থেকে ঝরছে ‘রক্ত’? কুসংস্কারে চাঞ্চল্য, যুক্তির আলোয় ব্যাখ্যা দিল বিজ্ঞান মঞ্চ

নিজস্ব সংবাদদাতা | চন্দ্রকোনা, পশ্চিম মেদিনীপুর | ২৮ অক্টোবর, ২০২৫

কাঁঠালগাছ থেকে ঝরছে লালচে তরল! মুহূর্তে গ্রাম জুড়ে চাঞ্চল্য — কেউ বলছেন দেবীর উপস্থিতি, কেউ আবার অমঙ্গলের সংকেত। ঘটনাস্থল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ১ নম্বর ব্লকের নতুন গ্রাম, যেখানে চারদিন ধরে চলছে কৌতূহল আর গুজবের দোলা।

গ্রামেরই এক গৃহবধূ মমতা মিদ্যা-র বাড়ির উঠোনে থাকা পুরনো কাঁঠালগাছের কাণ্ড থেকে টপটপ করে ঝরছে লালচে তরল। দৃশ্য দেখে আতঙ্কে গ্রামবাসীরা কেউ ঘট বসাচ্ছেন, কেউ ধূপধুনো জ্বালিয়ে পুজো দিচ্ছেন। কেউ আবার ভিডিও তুলে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। ফল— “রক্ত ঝরছে” দাবি ছড়িয়ে পড়েছে দ্রুতগতিতে।

কিন্তু বিজ্ঞান বলছে— এ কোনও রক্ত নয়, গাছের নিজস্ব রস।

ঘটনাস্থলে যান পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা। তাঁরা নমুনা সংগ্রহ করে স্থানীয়দের বোঝান— গাছের কাণ্ডে ফাটল ধরলে ভেতরের রঞ্জক পদার্থ (লেটেক্স) বাইরে বেরিয়ে আসে, যার মধ্যে প্রাকৃতিক ক্যারোটিনয়েড রঞ্জক থাকায় রঙ লালচে দেখা যায়।

বিজ্ঞান মঞ্চের কর্মী বাবুলাল শাসমল বলেন, “গাছেরও নিজস্ব রাসায়নিক গঠন আছে। মাটির প্রকৃতি, আর্দ্রতা আর ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে রসের রঙ বদলে যায়। এখানে রক্তের মতো রঙ দেখা গেলেও সেটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক।”

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. অমল কুমার মণ্ডল যুক্তি দেন, “কাঁঠাল জাতীয় গাছে ‘লেটেক্স’ নামে এক ধরনের আঠালো রস থাকে। তা কখনও সাদা, কখনও হলুদ, কখনও লালচে হয়। এর মধ্যে রক্তের উপাদান নেই।”

ড. তপন মিশ্র, পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, জানান — “এই রসের রঙ লাল হলেও এতে হিমোগ্লোবিন নেই, অক্সিজেন বহনও করতে পারে না। তাই একে রক্ত বলা ভুল।”

তবু গ্রামে এখনও ভয় আর কৌতূহলের মিশ্র আবহ বজায় আছে। কেউ বিজ্ঞানের যুক্তিতে আশ্বস্ত, কেউ আবার ‘অলৌকিকতা’র গল্পে বিশ্বাসী। স্থানীয় স্কুল ও পঞ্চায়েতের তরফে এখন সচেতনতা প্রচার শুরু হয়েছে— “গুজব নয়, বিজ্ঞানকে জানুন।”

এই ঘটনাই আবারও প্রমাণ করল— কুসংস্কারের চেয়ে যুক্তি ও বিজ্ঞানের আলোয় সত্যিকারের মুক্তি লুকিয়ে আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *