ব্যুরো রিপোর্ট: সংকট যে কোনও আবিষ্কারের সব থেকে বড় অনুপ্রেরণা। বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বাড়তে থাকা খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে প্রতিদিন কৃষিতে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্বাবনে উৎসাহ যোগাচ্ছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় চাষের জমি। তাই সেই জমির চাহিদা মেটাতে দীর্ঘ দিন ধরেই বিশ্বের নানান দেশ মরুভূমিগুলিকে কৃষি যোগ্য করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। চিন সহ বেশ কিছু দেশ তাতে আংশিক সাফল্যও পেয়েছে। তবে কোভিড কালে সংযুক্ত আরব আমিরসাহি যে উদ্যোগ নিয়েছিল তা বদলে দিতে পারে গোটা বিশ্বের কৃষির মানচিত্রটাই।
সংযুক্ত আরব আমিরসাহির এক কোণে এক অসাধারণ রূপান্তর প্রায় সম্পূর্ণ হওয়ার পথে। মাত্র ৪০ দিনের মধ্যে, এই স্থলবেষ্টিত মরুভূমির দেশটির একসময়ের অনুর্বর বালির জমিতে আরবের তীব্র সূর্যের তাপের নীচে পাকা, মিষ্টি তরমুজে ফলিয়ে ফেলেছে। যে দেশটিকে তার ৯০% ফসল আমদানি করতে হয়, তার জন্য এটি ছিল একটি অসাধারণ মাইলফলক। শুষ্ক, ছায়াহীন আরব মরুভূমিকে সুফলা করে তুলতে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে তার নাম দেওয়া হয়েছে ন্যানো ক্লে, যা কাদামাটি ও জলের সহজ মিশ্রণ।
তবে কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। মাটি এবং কৃষি বিজ্ঞানীরা ইতিহাস এবং ভূগোল ঘেঁটে দেখেন, মাটি উন্নত করার জন্য কাদামাটি ব্যবহার করা নতুন কিছু নয় – কৃষকরা হাজার হাজার বছর ধরে এটি করে আসছে। তবে, মাটিতে পুরু, ভারি কাদামাটি ব্যবহার করা ঐতিহাসিকভাবে খুব শ্রমসাধ্য এবং ভূগর্ভস্থ বাস্তুতন্ত্রের জন্য বিঘ্নজনক। এ ছাড়াও নানান সমস্যার সম্মুখিন হতে হয় বিজ্ঞানীদের।
প্রায় ১৫ বছর ধরে এই প্রযুক্তিটি একটু একটু করে এগিয়ে নিয়ে যওয়ার চেষ্টা হলেও, দুবাইয়ের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োস্যালাইন এগ্রিকালচার (ICBA) দ্বারা স্বাধীনভাবে পরীক্ষিত হওয়ার পর এটি বাণিজ্যিক ভাবে প্রয়োগ করার কাজ শুরু হয়েছে। যেখানে ন্যানো ক্লে তৈরির ভ্রাম্যমাণ ছোট ছোট কারখানা কাদামাটি ব্যবহার করে স্থানীয় ভাবে ন্যানোক্লে তৈরি করে। এবং সেগুলি মরুভূমিতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে প্রায় ৪৭ শতাংশ কম জলের ব্যবহারে মরুভূমিগুলি চাষের যোগ্য করে তোলা যেতে পারে।
সংযুক্ত আরব আমিরসাহিতে বসবাসকারী কিছু সম্প্রদায়গুলি ইতিমধ্যেই তাদের চার পাশের মরুভূমিকে উর্বর জমিতে পরিণত করার ক্ষমতা থেকে উপকৃত হয়েছে। এক হাজার বর্গমিটার জমিতে এই পরীক্ষা চালিয়ে প্রায় ২০০ কেজি তরমুজ, জুচিনি এবং মুক্তার বাজরা উৎপাদিত হয়েছিল। এই প্রযুক্তিকে সার্বিক ভাবে ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে আরও কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা প্রয়োজন। তবে আফ্রিকা, ভারত, চিনের মতো দেশে অনুর্বর জমি বা মরুভূমিকে আগামী দিনে শস্য শ্যামলা করে তোলার ক্ষেত্রে বড় স্বপ্ন দেখাতে পারে। বদলে যেতে পারে বিশ্বের খাদ্য উৎপাদনের মানচিত্রটাই।