বাংলার ফুল: কামিনী (JOrange asmine), লিখলেন কল্যাণ চক্রবর্তী

কামিনী ফুলের বাসেতে মেতেছে
বাংলার কত অলি
গাছের যতেক শাখাতে যেতেছে
ফুলেদের যত গলি।
কী সুঠাম দেহ দেখেছো কী কেহ
মিঠেল রঙ্গিন ফল,
পাতাগুলো কথা সেজেছে যে যথা
বাগানে বেড়ার দল।

‘কামিনী’ নামেই চেনে বাংলা। সাহেবের বাগানে মালীরা ডাকতো ‘অরেঞ্জ জেসমিন’ নামে। কারণ ওর ফলগুলো কমলা রঙের অবিশ্বাস্য-সুন্দর, ফুল আর ফল — দু’ জনেই ডাক দিয়ে যায় আমাদের, এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায়!

কামিনী-কাঞ্চনের সেই কামিনী-ই যেন নান্দনিকতায় ফুল হয়ে ফুটেছে ধরায়! একবার রহড়া আশ্রমের এক মালীর মুখে গল্প শুনেছিলাম…. যে অপরূপ সুন্দরী নারী তার জীবনে পেতো না শান্তি-সুখ; লুণ্ঠিত হত দস্যু-পুরুষের হিংস্রতায়, তারপর অকালে ঝরে যেত নিরানন্দে, নিভৃতে…..তাদের আত্মাই নাকি কামিনী ফুল হয়ে ফোটে বাগানে বাগানে! এমন নারী-নির্যাতন তো এই উপমহাদেশ দেখেছে ঢের ঢের, হাজার বছর ধরে। বাংলায় একসময় প্রবাদ প্রচলিত ছিল, “অতি বড় সুন্দরী না পায় বর/অতি বড় ঘরণী না পায় ঘর।”

যেমন মিষ্টি এই ফুলের শোভা, তেমনি ঐশী সুগন্ধ! হোস্টেল-বেলায় মৌতাত হয়ে আসতো মন, পড়ার টেবিলে বসে। এ কামিনী ত্যাগ করি সাধ্যি কী! তাই কামিনী আসতো আমারই ইচ্ছায় কাঁচের গ্লাসের জলে পাতা-ফুলের গুচ্ছে। এক অপরূপ মাদকতায়…..

কামিনীর আদি বাসভূমি দক্ষিণ চীন অথবা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, তারপর উপ-ক্রান্তীয়, ক্রান্তীয় আবহাওয়া জুড়ে ছড়িয়ে গিয়েছে দেশে দেশে তার অমল বৈভবে। এটি লেবু-পরিবারের একটি গাছ, ফ্যামিলি রূটেসি, উদ্ভিদবিদ্যাগত নাম Murrya exotica.

বাংলার বাদলদিনের মেঘের ঘনঘটায় তার রোমান্টিক শোভা, মেঘে মেঘে ঝিলিক দিয়ে নিশি-যাপন করতে আসে রাতের ঘনান্ধকার। সে কী এলো সুবাতাস ভোর! সকালে রাতের কাপড় ছেড়ে ঝরে যায় সহস্র সহস্র সাদা পাপড়ি কামিনী…

লেখক: ক্যালণ চক্রবর্তী, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *