নিজস্ব সংবাদদাতা, দাসপুর: পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরে সুলতাননগর জ্যোতগৌরাঙ্গ সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেডের ভোট ঘিরে উত্তেজনা (Election Tension) এখনও অব্যাহত। কে বোর্ড গড়বে তা নিয়ে চলছে তুমুল দড়ি টানাটানি।
অনেক টালবাহানার পর গত ১৪ জুলাই ২০২৪, মোট ৩১টি আসন বিশিষ্ট এই সমবায় সমিতির ভোট গ্রহণ হয়। ভোট গ্রহণ ঘিরে তুলুম উত্তেজনা ছড়ায় সুলতাননগর ও জটাধরপুর এলাকায়। প্রায় একশো বহিরাগত দুষ্কৃতী এনে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বাধা দিতে গিয়ে মাথা ফাটে অন্তত ৪ জন বিরোধী নেতা কর্মীর। এত কিছুর পরেও তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থিত প্রার্থীরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা জোগাড় করতে পারেনি। ৩১টি আসনেই প্রার্থী দিয়ে তারা জিতেছে ১৫টি আসনে। এদিকে বিরোধী সমবায় বাঁচাও মঞ্চের ১২ জন প্রার্থী এবং সিপিএম, বিজেপি সমর্থিত ২ জন করে প্রার্থী জয় ছিনিয়ে নিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল ম্যাজিক ফিগার থেকে মাত্র ১টি আসন দূরে থাকায়, তারা চেষ্টা করছে পর্যাপ্ত সমর্থন যোগাড় করে বোর্ড গঠনের পথে যেতে। অন্য দিকে বিরোধীরা এককাট্টা হয়ে তৃণমূলকে আটকে দিতে বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন সমবায় বাঁচাও মঞ্চের নেতা গণেশ সামন্ত ও মৃত্যুঞ্জয় অধিকারী।
২০১৯ সালে মেয়াদ শেষ হয়ে যায় এই সমবায় সমিতির পরিচালন সমিতির। কিন্তু নতুন বোর্ড গঠন বা ভোটের পথে না গিয়ে বার বার বাড়ানো হচ্ছিল মেয়াদ। তার বিরুদ্ধে সমবায় বাঁচাও মঞ্চের তরফে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে ভোটের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু লোকসভা নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ার কারণে সমবায়ের ভোট স্থগিত করে দেয় প্রশাসন। ভোট গ্রহণের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে কেন সমবায় নির্বাচন স্থগিত করা হল তার প্রতিবাদেও সুলতাননগরে কয়েক ঘণ্টা পথ অবরোধ করে দেয় সমবায় বাঁচাও মঞ্চ। পরে প্রশাসনের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার পর অবরোধ উঠে যায়।
অবশেষে ১৪ জুলাই ভোট গ্রহণের দিন স্থির হয়, সকাল থেকেই ছিল টান টান উত্তেজনা। সমবায় বাঁচাও মঞ্চের তরফে অভিযোগ করা হয় সুলতাননগরে দুটি ভোট গ্রহণ কেন্দ্র দখলের জন্য সকাল থেকেই প্রায় ১০০ বহিরাগত জড়ো করে তৃণমূল। কিন্তু বিরোধীদের বাধার মুখে পড়ে সেই চেষ্টা সফল হয়নি। পরে সেই বহিরগতরা অন্য একটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র, জটাধরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছে যায়। সেখানে বুথ দখল করে প্রায় ৪০টি ছাপ্পা ভোট দেয় বলে অভিযোগ। এমনকি বাধা দিতে গিয়ে মাথাও ফাটে কয়েক জন বিরোধী নেতা কর্মীর। পরে এলাকার মহিলাদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে বহিরগতরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধেও নিষ্কৃয়তার অভিযোগ তুলেছেন আক্রান্তরা।
ভোট গ্রহণের দিনই ভোট গণনা হলে দেখা যায় তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছতে পারেননি। ভোট গণনা ঘিরে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে টানটান উত্তেজনা। পরে সমবায় বাঁচাও মঞ্চের নেতা গণেশ সামন্ত জানিয়েছে, ‘বহিরাগত দৃষ্কৃতী এনে বুথ দখল, ছাপ্পা মেরেও মানুষের ভোটে হেরে গিয়েছে তৃণমূল। রুখে দিয়েছেন এলাকার মানুষই’। যদিও ছাপ্পা, বুথ দখল-সহ সব অভিযোগ তৃণমূলের তরফে অস্বীকার করা হয়েছে।