নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা: আরজি কর মেডিক্যাল হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় (RG KAR Hospital Murder Case) এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল তদন্তকারিরা। ধৃতের নাম সঞ্জয় রায়। তবে তার পরেও জুনিয়র চিকিৎসকদের বিক্ষোভ কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেননি। তাঁরা নিরাপত্তা এবং সঠিক তদন্ত ও শাস্তির দাবিতে অনড়। কর্মবিরতির ফলে সমস্যায় পড়েছেন রোগী এবং রোগীর আত্মীয়রা। তবে তাঁদের একাংশ নৈতিকভাবে জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
দেহ উদ্ধার
বৃহস্পতিবার রাতে ডিউটিতে ছিলেন ওই চিকিৎস। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টার সময়ে হাসপাতালের সেমিনার রুম থেকে ওই মহিলা চিকিৎসকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। প্রথমে তা আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা হয় বলেও অভিযোগ। পরে জুনিয়র ডাক্তার ও অন্যান্যদের কাছ থেকে জানা যায়, দেহে যা ক্ষত এবং শরীরের নিচের অংশে পোশাক না থাকা প্রমান করে এটি ধর্ষণ করে খুন।
রাতেই আরজি করে পৌঁছয় ফরেনসিক টিমের কর্তা এস কে সাহা। তিনি জানান, “যেটা দেখলাম, ঠোঁটে, গালে, গলায় মার্ক রয়েছে। দেহ চিৎ অবস্থায় ছিল, শোয়ানো ছিল। আমরা যখন গিয়েছিলাম, দেহ পুরো কভার ছিল।” দেহে পোশাক না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “চাদর চাপা ছিল। আমরা তো চাদর সরিয়ে দেখিনি। তাই পোশাক ছিল কিনা, তা বলা যাচ্ছে না।” ময়নাতদন্তের রিপোর্টেই পুরো বিষয়টা স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছেন ফরেনসিক কর্তারা।
ঘটনা সামনে আসার পরই মৃত চিকিৎসকের বাবা মাকে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঠিক তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। গোটা ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিকে দ্রুত তদন্তের জন্য টিম গঠন করা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকেই পুলিশ কর্তারা দফায় দফায় হাসপাতালে যান।
মৃত চিকিৎসক উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির বাসিন্দা। শুক্রবারই হাসপাতালে যান পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষ। পরে তিনি বলেন, “খুন করেছে এতে আমার কোনও সন্দেহ নেই, ব্রুটালি মার্ডার। কে করেছেন, তাকে খুঁজে বের করতেই হবে।”
বিক্ষোভ
শুক্রবার হাসাপাতেল যান সিপিএম এবং বিজেপির প্রতিনিধি দলও। তাঁরা সেখানে বিক্ষোভ দেখান। ডিওয়াইএফআই নেত্রী মিনাক্ষী মুখার্জী বলেন, কোথায় সরকার, কোথায় পুলিশ? বাম নেতা কর্মীদের তরফে বিক্ষোভ মিছিলও করা হয়। মিছিল থেকে মিনাক্ষী প্রশ্ন তোলেন, যে হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুন হল, সেই হাসপাতালে সেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কী করে ময়নাতদন্তের দায়িত্ব পান? এমনকি ফরেন্সিক টিমে জুনিয়র চিকিৎসকদের রাখা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। শুধু তাই নয় পুলিশ প্রশাসন এবং মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন মিনাক্ষী। প্রতিবাদে সরব হয়েছে শুভেন্দু অধিকারী থেকে অন্য বিজেপি নেতারাও।
হেডফোন
এদিকে তদন্তে নেমে একটি ছেঁড়া ব্লুটুথ হেডফোনের তার পাওয়া যায়। যেটি মৃত মহিলা চিকিৎসকের দেহের পাশেই পড়েছিল একটি ছেঁড়া তার। তার পর খোঁজ শুরু হয় বৃহস্পতিবার রাতে কারা কার ডিউটিতে ছিলেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। সেকানেই সঞ্জয় রায়ের নাম উঠে আসে। প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত, ধস্তাধস্তিতেই ওই হেডফোনের তার ছিঁড়ে যায়। পুলিশ সূত্রে দাবি, জেরায় সঞ্জয় অভিযোগ স্বীকার করেছে।
কে এই সঞ্জয়?
পুলিশ সূত্রের খবর, সঞ্জয় হাসপাতালের কেউ নয়। তবুও আরজিকর মেডিক্যালের সর্বত্রই তার অবাধ যাতাযাত। অতীতেও এই হাসপাতালে দালাল রাজের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। পড়ুয়াদের একাংশ পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই দালাল রাজের অন্যতম পাণ্ডা এই সঞ্জয়। দিনে রাতে সবসময়ই তার অবাধ যাতায়াত ছিল হাসপাতালের সর্বত্র। সেই সুযোগ নিয়েই একা পেয়ে ধর্ষণ করে খুন করেছে মহিলা চিকিৎসককে, এমনই অভিযোগ উঠছে।
এদিকে এই অবস্থায় আজ শনিবারও নিরাপত্তা ও মৃত চিকিৎসকের প্রতি ন্যায় বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মবিরতি অব্যাহত। একই সঙ্গে হাসপাতালে হাসপাতালে দালাল রাজের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ বাড়ছে।